মূষিক উপাখ্যান -কার্তিকমাসে দীপমাহাত্ম্য

পদ্মপুরাণে শৌনক সূত গোস্বামীকে বলেছেন, “হে সূত! কার্তিকব্রতের ফল কি? এটা না করলেই বা দোষ কি? আমার নিকটে কার্তিকব্রতের মাহাত্ম্য বলুন।” 
hksamacar-prodip

সূত বললেন, “হে মুনিশ্রেষ্ঠ! জৈমিনির প্রশ্নে ব্যাসদেব যা বলেছিলেন তা কীর্তন করছি। কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি মৎস্য, তৈল ও মৈথুন ত্যাগ করে, সে বহুজন্মকৃত পাপ মুক্ত হয়ে হরিগৃহে গমন করে। যে নর কার্তিকমাসে মৎস্য ও মৈথুন ত্যাগ না করে, সে নিশ্চয়ই প্রতি জন্মে অজ্ঞান স্থাবরাদি ও শূকর জন্ম লাভ করে। মানবগণ কার্তিকমাসে তুলসীপত্র দ্বারা জনার্দনের পূজা করলে পত্রে পত্রে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হয়। কার্তিকমাসে যে বকপুষ্প দ্বারা জনার্দনের পূজা করে সে হরির কৃপায় দেবগণেরও দুর্লভ মোক্ষ প্রাপ্ত। যে নর সর্পিসংযুক্ত (ঘৃত যুক্ত) অন্ন হরিকে দান করে সে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে হরিমন্দিরে গমন করে। যে নর কার্তিকমাসে একটি পদ্মও যদি দান করে, সে পাপবর্জিত হয়ে অন্তে বিষ্ণুপদে গমন করে। যে নর হরিপ্রিয় কার্তিকমাসে প্রাতঃস্নান করে, যে সর্বতীর্থে স্নান করলে যে ফল, সেই ফল পায়। যে নর কার্তিকমাসে নভোমণ্ডলে দীপ দান করে, শ্রীহরি তার প্রতি সদা তুষ্ট থাকেন। যে জন কৃষ্ণমন্দিরে সঘৃত দীপ দান করে তার মাহাত্ম্য বিশেষরূপে বর্ণনা করছি, শ্রবণ কর।”
ত্রেতাযুগে বৈকুণ্ঠ নামে একজন শুচি ব্রাহ্মণ বাস করতেন। সেই দ্বিজ একদা কার্তিকমাসে শ্রীহরির পুরোভাগে ঘৃতপূর্ণ দীপ দান করে গৃহে গমন করলেন। সেই সময় এক মুষিক ঘৃত খেতে আরম্ভ করলে প্রদীপ উজ্জ্বল হলো; অমনি সে প্রাণভয়ে পলায়ন করল। পলায়ন কালে এক সর্প কর্তৃক দংশিত হয়ে সে প্রাণত্যাগ করল। তখন যমদূতগণ এসে তাকে রজ্জুবদ্ধ করে নিয়ে যাবার উপক্রম করল। অমনি শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী চতুর্ভূজ বিষ্ণুদূতগণ স্বর্ণ নির্মিত এক বিমানে করে সেখানে আগমন করল। সেই দূতগণ দ্রুত পাশবন্ধন ছিন্ন করে যমকিঙ্করগণকে বলল, - ‘হে মূঢ়গণ! এ মুষিক বিষ্ণুভক্ত; একে বৃথা বন্ধন করেছিস। যদি তোদের জীবনের আশা থাকে, তবে শীঘ্র প্রত্যাবর্তন কর।’ এই কথা শুনে যমদূতগণ প্রকম্পিত কায়ে জিজ্ঞাসা করল, - ‘ হে বিষ্ণুদূতগণ! তোমরা একে কোন্ পুণ্যপ্রভাবে বিষ্ণুপুরে নিয়ে যাচ্ছ? এ মহাপাপী; যমালয়ে শাস্তি বিধানই এর কর্তব্য।’ বিষ্ণুদূতগণ বলল, - ‘এই মুষিক বাসুদেবের পুরোভাগে প্রদীপ বোধন (উষ্কিয়ে দেওয়া) করেছে; সেই কর্ম বশতই একে বিষ্ণুমন্দিরে নিয়ে যাচ্ছি।’
যে ব্যক্তি অনিচ্ছায়ও বিষ্ণুর অগ্রে দীপের বোধন করে, সে কোটিজন্মার্জিত পাপ পরিহার করে হরির গৃহে গমন করে। কার্তিকমাসে একাদশী তিথিতে যে নর ভক্তি সহকারে প্রদীপ দান করে, তার পুণ্য আখ্যান করতে শ্রীহরি ভিন্ন আর কেউই সমর্থ নয়। যেজন হরির গৃহে ভক্তিপূর্বক ঘৃতপূর্ণ দীপ দান করে, তার সহ¯্র অশ্বমেধেই বা কি প্রয়োজন? অশ্বমেধকর্তা স্বর্গে গমন করে, কিন্তু কার্তিকে দীপদাতা হরিমন্দিরে বৈকুণ্ঠে গমন করে। বিষ্ণুদূতগণ মুখে এরূপ বাক্য শুনে সেই যমদূতগণ যথাস্থানে গমন করল। তখন বিষ্ণুদূতগণ সেই মুষিকের রথে আরোহণ করে বিষ্ণুমন্দিরে গমন করল। শত মন্বতর কাল সে বিষ্ণুসান্নিধ্যেই রইল। তারপর হরির কৃপায় সে মর্ত্যভূমে রাজকন্যা হয়ে জন্ম লাভ করল। সে পুত্রে-পৌত্রে সমাযুক্ত হয়ে চিরকাল সুখভোগ করল। পরিশেষে সে হরিসেবা-মাহাত্ম্যে ইহলোক হতে গোলোকে গমন করল। মর্তবাসী এই উত্তম দীপমাহাত্ম্য শ্রবণ করে সেই সর্বপাপে বিনির্মুক্ত হয়ে বিষ্ণুমন্দিরে গমন করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন