![]() |
Srivas Pandit |
"পরমেশ্বর ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ ভক্তগণের একটি দল ছিল, যেখানে সমস্ত ভক্তগণের নেতা ছিলেন একজন অত্যন্ত বিনয়ী গৃহস্থ ভক্ত। তাঁর একজন বিখ্যাত পুত্র ছিল। এবং তাঁরা তিন ভাই। তাঁর একটি বাগানবাড়ি ছিল। এবং সেই গৃহপ্রাঙ্গণে এমন কীর্তন হতো, যেমনটি আমি পূর্বে উল্লেখ করেছিলাম, যা চলতেই থাকত। একদিন সেখানে খুব সুন্দর কীর্তন চলছিল। অর্থাৎ হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন চলছিল, কীর্তন করা মানে ভগবানের মহিমা কীর্তন করা। তো সকল ভক্তগণ নৃত্য কীর্তন করছিলেন এবং প্রত্যেকে অসীম চিন্ময় আনন্দ অনুভব করছিলেন। সেইদিন শ্রীবাস ঠাকুরের পুত্র মারা গেল।
ঘরের মহিলারা যখন দেখলেন যে পুত্র মারা গিয়েছে, তারা ক্রন্দন করতে শুরু করল। স্বাভাবিকভাবেই কেউ যখন মারা যায়, মা বোন এবং অন্য সবাই কাঁদতে শুরু করে। তো বাইরে কীর্তন চলছিল, আর শ্রীবাস অন্তঃপুরে কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি অন্তঃপুরে প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা করলেন, ''কি হচ্ছে?''
পুত্র মারা গিয়েছে। পুত্র মারা গিয়েছে। এই বলে তারা সবাই কান্না করছিল।
তিনি বললেন, ''কি? তোমরা এই জন্য কান্না করছো? তোমরা কি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কীর্তনে বাঁধা প্রদান করতে চাও? বন্ধ কর, এক্ষুণি বন্ধ কর! কোন ক্রন্দন নয়!''
আমরা কিভাবে কান্না বন্ধ করব? ছেলেটি মারা গিয়েছে!
যদি তোমরা এক্ষুণি কান্না না থামাও, তাহলে আমি গঙ্গায় গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিব। তোমরা এক্ষুণি কান্না বন্ধ কর!
তখন তারা ভয় পেল, মাত্রই তারা তাদের পুত্রকে হারিয়েছে, তাই তারা আর তাদের স্বামী, পিতাকে হারাতে চাইল না।
তিনি বললেন, তোমরা কান্না করার সাহস করো না। তোমরা কি জান না যে, বাইরে কীর্তন হচ্ছে এবং এই সময়েই আমাদের পুত্র মারা গিয়েছে, সে কতই না ভাগ্যবান। এখন স্বয়ং মহাপ্রভু এখানে রয়েছেন, ভক্তরা কীর্তন করছেন এবং সে দেহত্যাগ করল।
কেঁদো না, আমি আবার আসছি, এখন আমি কীর্তনে যাচ্ছি। এই বলে তাদের অন্তঃপুরে রেখে শ্রীবাস ঠাকুর বাইরে এলেন। অন্তঃপুরে নারীগণ কোনভাবে শান্ত হল। শ্রীবাস ঠাকুর সংকীর্তনে যোগ দিলেন। তিনি ভক্তদের সঙ্গে সারারাত কীর্তন করলেন, এটি পরমানন্দদায়ক ছিল। সবাই নৃত্য কীর্তন করছিল এবং এটি চলতেই থাকল। অবশেষে সূর্যোদয় হলে, মহাপ্রভু কীর্তন সমাপনের নির্দেশ দিলেন।
তখন শোরগোল হল যে, ''শ্রীবাসপুত্র মারা গিয়েছে। শ্রীবাসপুত্র মারা গিয়েছে।'' সবাইকে দুঃখিত দেখাচ্ছিল। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জানতেন কি ঘটছিল। কিন্তু তবু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ''সবাইকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কেন?'' মহাপ্রভু সবার হৃদয়ে অবস্থান করছেন, তিনি জানতেন সবাই কি ভাবছে। একজন বলে উঠল, শ্রীবাসপুত্র মারা গিয়েছে।
মহাপ্রভু বললেন, ''এই জন্যই আমি বিষণ্ণতা অনুভব করছি। কোন সময়ে- কখন সে মারা গিয়েছে?''
সে সূর্যাস্তের সময় মারা যায়।
''সূর্যাস্তের সময়! আর এখন সূর্যোদয়! কেন কেউ আমাকে কিছু জানালে না?''
তখন শ্রীবাস বললেন, আমি তোমার কীর্তনে বাঁধা দিতে চাই নি। আমি চাই নি, তোমার আনন্দে বাঁধা আসুক। আমি তোমার সংকীর্তনে বাঁধা দিতে চাই নি, তাই তোমাকে কিছু জানায় নি।
তখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, ''কিভাবে আমি আমার ভক্তদের কখনো পরিত্যাগ করতে পারি? তার নিজের পুত্র মারা গিয়েছে, কিন্তু তাতেও আমার প্রতি তার বিশ্বাস বা ভক্তি বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। আমি যখন কীর্তন করছিলাম, আমার কীর্তনে বাঁধা আসবে বলে, এমকি সে তার পুত্রের মৃত্যুর সংবাদও আমাকে জানায় নি।
''কী অপূর্ব ভক্তি'' বলে মহাপ্রভু ক্রন্দন করতে লাগলেন।
তারপর তারা শেষকৃত্যের জন্য মৃতদেহটি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইল।
তখন মহাপ্রভু বললেন, ''মৃতদেহটি এখানে নিয়ে এসো।''
তারা মৃতদেহটিকে আঙ্গিনায় এনে রাখল। মহাপ্রভু মৃতদেহটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ''কেন? কেন তুমি শ্রীবাসের গৃহ ছেড়ে যেতে চাও?''
মহাপ্রভু বললেন, ''এই জন্যই আমি বিষণ্ণতা অনুভব করছি। কোন সময়ে- কখন সে মারা গিয়েছে?''
সে সূর্যাস্তের সময় মারা যায়।
''সূর্যাস্তের সময়! আর এখন সূর্যোদয়! কেন কেউ আমাকে কিছু জানালে না?''
তখন শ্রীবাস বললেন, আমি তোমার কীর্তনে বাঁধা দিতে চাই নি। আমি চাই নি, তোমার আনন্দে বাঁধা আসুক। আমি তোমার সংকীর্তনে বাঁধা দিতে চাই নি, তাই তোমাকে কিছু জানায় নি।
তখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, ''কিভাবে আমি আমার ভক্তদের কখনো পরিত্যাগ করতে পারি? তার নিজের পুত্র মারা গিয়েছে, কিন্তু তাতেও আমার প্রতি তার বিশ্বাস বা ভক্তি বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। আমি যখন কীর্তন করছিলাম, আমার কীর্তনে বাঁধা আসবে বলে, এমকি সে তার পুত্রের মৃত্যুর সংবাদও আমাকে জানায় নি।
''কী অপূর্ব ভক্তি'' বলে মহাপ্রভু ক্রন্দন করতে লাগলেন।
তারপর তারা শেষকৃত্যের জন্য মৃতদেহটি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইল।
তখন মহাপ্রভু বললেন, ''মৃতদেহটি এখানে নিয়ে এসো।''
তারা মৃতদেহটিকে আঙ্গিনায় এনে রাখল। মহাপ্রভু মৃতদেহটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ''কেন? কেন তুমি শ্রীবাসের গৃহ ছেড়ে যেতে চাও?''
মৃতদেহটি উঠে বসল এবং বলতে লাগল, ''হে প্রভু, আপনার ইচ্ছার বাইরে কেউ কিছু করতে পারে না। এই দেহের কাল শেষ হলে, আমাদের চলে যেতে হবে। আমি ভাগ্যবান যে, এই পরিবারে জন্মলাভ করেছি, সমস্ত ভক্তদের সান্নিধ্য লাভ করেছি। কিন্তু আমরা প্রত্যেকে স্বাধীন এবং আমরা নিজেদের কর্মের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছি। আমার কত জন পিতা মাতা ছিল! কিন্তু প্রকৃত মাতা কে, প্রকৃত পিতা কে এবং প্রকৃত সন্তানই বা কে? এখন আমার যাওয়ার সময় হয়েছে। আমার কেবল এই প্রার্থনা, যেন সর্বদা আপনার ভক্তদের সঙ্গে থাকতে পারি। কৃপাপূর্বক আমাকে এটি থেকে বঞ্চিত করবেন না।'' তারপর পুনরায় সেই দেহটি শায়িত হয়ে নীরব হল।
''হরিবোল! হরিবোল! হরিবোল!'' সবাই ঊর্ধে লাফাতে লাগলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শ্রীবাসের সদ্যমৃত পুত্রকে মুহূর্তে পুনর্জীবিত করলেন এবং ইতিমধ্যে সে সমস্ত ভক্তদের সম্মুখে কথা বললো। শ্রীবাস এবং অন্য ভক্তরা মহাপ্রভুর নিকটে গেলেন এবং বললেন, ''তুমি আমাদের পিতা, তুমি আমাদের মাতা, তুমি আমাদের পুত্র, তুমিই আমাদের সবকিছু, আমাদের ভাই, প্রভু। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু...... মহাপ্রভু বললেন, ''তুমি নিত্যানন্দ প্রভু এবং আমাকে তোমার পুত্র হিসেবে গ্রহণ করতে পারো।''
তারপর তারা সবাই শ্রীবাসপুত্রের শেষকৃত্য সমাপন করলেন এবং এরপর গঙ্গায় স্নান করলেন। এভাবে সবাই চিন্ময় আনন্দ, চিন্ময় কৃষ্ণপ্রেম দ্বারা পূর্ণ হলেন। পরিবারের সদস্যদের পুত্র হারানোর শোক দূরীভূত হল।
তারপর তারা সবাই শ্রীবাসপুত্রের শেষকৃত্য সমাপন করলেন এবং এরপর গঙ্গায় স্নান করলেন। এভাবে সবাই চিন্ময় আনন্দ, চিন্ময় কৃষ্ণপ্রেম দ্বারা পূর্ণ হলেন। পরিবারের সদস্যদের পুত্র হারানোর শোক দূরীভূত হল।
পিতামাতার কাছে পুত্র হারানোর চেয়ে এই পৃথিবীতে আর অধিক কি শোক থাকতে পারে? কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যখন কারো পারমার্থিক লক্ষ্য থাকে, আমি কে, বিষয়টা হল, আমাদের দুইটি শরীর রয়েছে। স্থুল শরীর যেটি মাটি, জল এবং অন্যান্য উপাদান দ্বারা তৈরি এবং সূক্ষদেহ, যেটি হল মানস শরীর। যখন স্থুল দেহের মৃত্যু ঘটে, তখন সূক্ষদেহ আত্মাটিকে বহন করে পরবর্তী দেহে নিয়ে যায়। প্রত্যেকেরই সুখ দুঃখ রূপ কর্মবন্ধন রয়েছে।
সন্তানটির ভবিষ্যৎ তার পিতামাতার মত নাও হতে পারে। পূর্বকৃত কর্মের ফল স্বরূপ প্রত্যেকের নিয়তি ভিন্ন হয়ে থাকে। এটাই কর্মের প্রকৃতি। এইভাবেই আমরা কখনো পরিবার, কখনো বন্ধুত্ব, কখনো বা সমাজ বা অন্য কোন রূপে একত্রিত হই.....আবার নিশ্চিতভাবে বিচ্ছিন্নও হই। কিন্তু শ্রীবাস ঠাকুর, তাকে একজন গৃহী ব্যক্তি মনে হলেও, তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী। তিনি গৃহী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সিদ্ধাত্মা। তিনি জানতেন যে, তিনি এই শরীর নন, তিনি জানতেন, তার পুত্র এই জড়দেহটি নয়, তার স্ত্রী এই জড় শরীরটি নয়। কিন্তু তিনি যথাযথভাবে সেই সম্পর্কগুলো পালন করেন, যাতে তারা তার পারমার্থিক জীবনে কোন প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি না করে। তিনি তার পরিবার এবং সমগ্র সমাজের পারমার্থিক প্রগতির জন্য কাজ করতেন। "
সন্তানটির ভবিষ্যৎ তার পিতামাতার মত নাও হতে পারে। পূর্বকৃত কর্মের ফল স্বরূপ প্রত্যেকের নিয়তি ভিন্ন হয়ে থাকে। এটাই কর্মের প্রকৃতি। এইভাবেই আমরা কখনো পরিবার, কখনো বন্ধুত্ব, কখনো বা সমাজ বা অন্য কোন রূপে একত্রিত হই.....আবার নিশ্চিতভাবে বিচ্ছিন্নও হই। কিন্তু শ্রীবাস ঠাকুর, তাকে একজন গৃহী ব্যক্তি মনে হলেও, তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী। তিনি গৃহী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সিদ্ধাত্মা। তিনি জানতেন যে, তিনি এই শরীর নন, তিনি জানতেন, তার পুত্র এই জড়দেহটি নয়, তার স্ত্রী এই জড় শরীরটি নয়। কিন্তু তিনি যথাযথভাবে সেই সম্পর্কগুলো পালন করেন, যাতে তারা তার পারমার্থিক জীবনে কোন প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি না করে। তিনি তার পরিবার এবং সমগ্র সমাজের পারমার্থিক প্রগতির জন্য কাজ করতেন। "
শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ
নিউ অরলিন্স,
রবিবার, ১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮১
Tags
প্রবচন