আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শ্রীল ভক্তিচারু স্বামী মহারাজের ৭২তম শুভ আবির্ভাব তিথি ও ব্যাসপূজা মহোৎসব
শ্রীমায়াপুর-মায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দিরে প্রদত্ত ভাগবত প্রবচন থেকে সংকলিত
দীক্ষার
সময় শিষ্য তার গুরুদেবের কাছে
নিজেকে সমর্পণ করে, তখন এই
যে সমর্পিত আত্মা যে শিষ্য গুরুদেবের
প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে কৃষ্ণ তাকে গ্রহণ করেন।
যদি আমরা পুরোপুরি আত্মসমর্পণ
করি তাহলে কৃষ্ণ তা গ্রহণ করবেন।
আমাদের স্বরূপে আমরা কৃষ্ণের নিত্যদাস। স্বস্তি- স্ব-অস্তি অর্থাৎ আমাদের স্বরূপে স্থিতি হচ্ছে আমাদের প্রকৃত স্থিতি। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা আমাদের স্বরূপে অধিষ্ঠিত হতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রকৃত শান্তি লাভ করতে পারব না। আমাদের প্রকৃত পরিচয় হলো আমরা সবাই ভগবানের নিত্যদাস।
আমাদের স্বরূপে আমরা কৃষ্ণের নিত্যদাস। স্বস্তি- স্ব-অস্তি অর্থাৎ আমাদের স্বরূপে স্থিতি হচ্ছে আমাদের প্রকৃত স্থিতি। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা আমাদের স্বরূপে অধিষ্ঠিত হতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রকৃত শান্তি লাভ করতে পারব না। আমাদের প্রকৃত পরিচয় হলো আমরা সবাই ভগবানের নিত্যদাস।
“দিব্যজ্ঞানং দদ্যাৎ
কুর্বন্তি
পাপস্য
সংক্ষয়ম্।”
- দিব্যজ্ঞান প্রদান এবং গ্রহণের ফলে
পাপের ক্ষয় হয়। দিব্য
জ্ঞানম্- এর ‘দি’ এবং
সংক্ষয়ম্ এর ‘ক্ষ’ - এই
দুটি অক্ষরের যোগে হয় ‘দীক্ষা’।
শ্রীগুরুদেব
দিব্যজ্ঞান দান করেন এবং
তার ফলে এ দিব্যজ্ঞান
গ্রহণকারী শিষ্যের পাপের ক্ষয় হয়। এই
দিব্য জ্ঞান লাভের ফলে ভগবৎতত্ত্ব-জ্ঞান
হৃদয়ে প্রকাশিত হয় আর সেই
ভগবৎত্ত্বজ্ঞান হচ্ছে জীবের একমাত্র কাম্য।
জড়জগৎ
এবং চিৎ-জগৎ- দুটি
জগৎ রয়েছে। আমরা জড়জগতে রয়েছি
কিন্তু এই নাশমান, ক্ষয়শীল,
অনিত্য। জড়জগতের ঊর্ধে একটি নিত্য শাশ্বত
আনন্দময় জগৎ রয়েছে, সেই
জগৎ থেকে আমরা সকলে
এসেছি। আমাদের স্বরূপে আমরা চিন্ময় আত্মা
এবং এই চিন্ময় আত্মা
জড়জগতের বস্তু নয়, আত্মা হলো
চেতন জগতের বস্তু সেই চিন্ময় জগৎ
থেকে সকল আত্মা এসেছে,
আমরা সকলে এসেছি। আমাদের
প্রকৃত আলয় সেই চিন্ময়
ভগবদ্ধাম, যেখানে ভগবান নিত্য বিরাজ করেন তাঁর অন্তরঙ্গ
পার্ষদদের নিয়ে। এই জড়জগৎ থেকে
সেই চিন্ময় জগতে ফিরে যাওয়ার
যে পন্থা সেটি গুরু-শিষ্য-পরম্পরাধারায় অনাদিকাল থেকে প্রবাহিত হচ্ছে।
সৃষ্টির আদিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ব্রহ্মাকে এই দিব্যজ্ঞান দান
করেন। ব্রহ্মা ভগবানকে হৃদয়ঙ্গম করে বা ভগবানকে
জেনে ভগবান সম্বন্ধে যে কথাগুলো বলে
গেছেন সেটি হচ্ছে ‘ব্রহ্মসংহিতা’।
সৃষ্টির
আদিতে প্রথম সৃষ্ট জীব ব্রহ্মাকে ভগবান
স্বয়ং এই দিব্যজ্ঞান দান
করেন। ব্রহ্মা সেই দিব্যজ্ঞান দান
করেন তাঁর পুত্র নারদ
মুনিকে। নারদ মুনি সেই
জ্ঞান দান করেন ব্যাসদেবকে,
ব্যাসদেব তা প্রদান করেন
মধ্বাচার্যকে। এইভাবে গুরু-শিষ্য-পরম্পরাধারায়
এই দিব্যজ্ঞান প্রবাহিত হচ্ছে। এই জ্ঞান প্রাপ্তির
উপায় হচ্ছে শ্রীগুরুদেবের চরণাশ্রয় করে এই জ্ঞান
লাভ করা। গুরুদেবের কাছে
শিষ্য এই জ্ঞান প্রাপ্ত
হন, যথাসময়ে শিষ্য গুরু হয়ে তাঁর
শিষ্যকে সেই জ্ঞান দান
করেন, তার শিষ্য আবার
কালক্রমে গুরু হয়ে তার
শিষ্যকে এই জ্ঞান দান
করেন। গুরু-শিষ্যের পারস্পরিক
জ্ঞান প্রদান এবং গ্রহণের যে
ক্রিয়া সেটিকে বলা হয় গুরু-শিষ্য-পরম্পরা। পরম্পরাক্রমে এই জ্ঞান প্রবাহিত
হচ্ছে। অতএব এই জ্ঞান
প্রাপ্ত হতে হলে আমাদের
এমন কোনো ব্যক্তির কাছে
যেতে হবে যাঁর কাছে
এই জ্ঞান রয়েছে এবং তিনিই এই
জ্ঞান প্রদান করতে পারেন।
ভগবদ্গীতাতে
ভগবান সেই কথা অর্জুনকে
বলেছেন যে তুমি যদি
জ্ঞান প্রাপ্ত হতে চাও তাহলে-
তদ্বিদ্ধি
প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।
উপদেক্ষ্যন্তি
তে জ্ঞানম্ জ্ঞানীনস্তÍত্ত্বদর্শিনঃ ॥
“অপ্রাকৃত
বস্তু নহে প্রাকৃত গোচর”-
যে বস্তুটি জড়জগতের অতীত সেই বস্তুটি
জড় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, প্রাকৃত ইন্দ্রিয়ের
দ্বারা আমরা তা উপলব্ধি
করতে পারি না। সেই
বস্তুটি পাওয়ার উপায় হচ্ছে যার
কাছে তা আছে তার
কাছে যেতে হবে, কীভাবে
যেতে হবে? তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন-
অর্থাৎ প্রকৃষ্টরূপে নিজেকে সমর্পণ করে। যেমন ছাত্র
যদি কোনো শিক্ষকের কাছে
শিক্ষালাভ করতে চায় তাহলে
শিক্ষকের কাছে তাকে আত্মসমর্পণ
করতে হবে, নিজে বিনীত
হয়ে তাঁকে যথাযথ সম্মান প্রদান করে এই জ্ঞানটি
প্রাপ্ত হতে হবে। ঐকান্তিকভাবে
তাঁর সন্তুষ্টি বিধান করতে হবে। তার
ফলে তিনি তখন সেই
জ্ঞান দান করবেন, তিনি
সেটি দান করতে পারেন
কারণ তাঁর কাছে সেই
বস্তুটি রয়েছে- এটিই হচ্ছে পন্থা।
আবার
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাই
সেখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন- ইমং বিবস্বতে যোগং
প্রোক্তবান্ অহম্ অব্যয়ম্ - এই
জ্ঞানটি আমি সূর্যদেব বিবস্বানকে
দান করেছিলাম।
বিবস্বান
মনবে প্রাহ- বিবস্বান তাঁর পুত্র বৈবস্বত
মনুকে দান করেন। মনু
ইক্ষাকবেহব্রবীৎ- এবং মনু তা
ইক্ষাকুকে দান করেন। “এবং পরম্পরা প্রাপ্তম্
ইমং
রাজর্ষয়
বিদুঃ “- এইভাবে পরম্পরার
মাধ্যমে এই যোগটি রাজর্ষিদের
মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু, কালেনেহ মহতা যোগা নষ্টঃ
পরন্তপÑ কালক্রমে এই যোগটি নষ্ট
হয়ে যাওয়ায় কৃষ্ণ আবার এসে ভগবদ্গীতার
মাধ্যমে এই জ্ঞানটি প্রদান
করলেন। অতএব এটিই হচ্ছে
দিব্যজ্ঞান লাভের উপায়। অর্থাৎ এই দীক্ষার মূল
বিষয়টি হচ্ছে দিব্যজ্ঞান। অনুষ্ঠানটি আনুষঙ্গিক কিন্তু প্রকৃত বস্তুটি হচ্ছে দিব্যজ্ঞান এবং দিব্যজ্ঞানটি যদি
লাভ না হয় তাহলে
দীক্ষা অর্থহীন। সেই
দিব্যজ্ঞান যাতে আমরা লাভ
করতে পারি সেই চেষ্টা
আমাদের করতে হবে এবং
সেই জন্য দীক্ষার আয়োজন।
আবার বলা হচ্ছে, “দীক্ষাকালে
শিষ্য করে আত্মসমর্পণ। সেই
কালে কৃষ্ণ তারে করে আত্মসম
॥” দীক্ষার সময় শিষ্য তার
গুরুদেবের কাছে নিজেকে সমর্পণ
করে, তখন এই যে
সমর্পিত আত্মা যে শিষ্য গুরুদেবের
প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে কৃষ্ণ তাকে গ্রহণ করেন।
যদি আমরা পুরোপুরিভাবে আত্মসমর্পণ
করি তাহলে কৃষ্ণ তা গ্রহণ করবেন।
গুরুদেব
ব্যক্তি নন। তাঁর একমাত্র
যোগ্যতা হচ্ছে তিনি স˜গুরুর
শিষ্য এবং তিনি তাঁর
গুরুদেবের কাছ থেকে জ্ঞানটি
প্রাপ্ত হয়েছেন। অর্থাৎ তিনি একজন সদ্গুরুর
শিষ্য এবং তাঁর কাছ
থেকে তিনি নিষ্ঠা সহকারে
এই জ্ঞানটি গ্রহণ করেছেন। গুরুদেব উদ্ধার করেন না, গুরুদেবের
মাধ্যমে শিষ্য উদ্ধার লাভ করেন। উদ্ধারকর্তা
হচ্ছেন কৃষ্ণ এবং গুরুদেব তাঁর
প্রতিনিধি। যেমন কোনো প্রতিনিধির
কাছে গেলে এবং তিনি
যদি যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন তাহলে সেই
বস্তুটি পাওয়া যাবে। যেমন আমি একটি
অ্যাম্বাসেডার গাড়ি কিনতে চাই
এবং তার প্রতিনিধির কাছে
আমাকে অর্ডার পেশ করে যদি
আমি তাকে চেক দেই
তাহলে আমার কাছে গাড়িটা
পৌঁছাবে কি না? নিশ্চয়ই
পৌঁছাবে। এর জন্য হিন্দ্
মোটোরের মালিকের কাছে গিয়ে চেকটা
দিতে হবে না। আমাকে
অর্ডারটা পেশ করতে হবে
হিন্দ্ মোটোরের সেলস্ রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে। সে যদি যথাযথ
প্রতিনিধি হয় তাহলে তার
মাধ্যমে আমি বস্তুটি প্রাপ্ত
হবো। গাড়িটি কিন্তু ওই প্রতিনিধির নয়,
গাড়িটি মালিকের। কিন্তু তিনি যেহেতু প্রতিনিধিত্ব
করছেন তাই তাঁর মাধ্যমে
আমরা বস্তুটি পেতে পারি। তেমনই
আমরা কৃষ্ণের কৃপা লাভ করতে
চাই আর গুরুদেব কৃষ্ণের
প্রতিনিধিত্ব করছেন। এইভাবে তিনি হচ্ছেন কৃষ্ণের
ভক্ত। তাই গুরুদেবের যোগ্যতা
হচ্ছে তিনি কৃষ্ণভক্ত।
কিবা
বিপ্র, কিবা ন্যাসী, শূদ্র
কেনে নয়।
যেই
কৃষ্ণ তত্ত্ববেত্তা সই গুরু হয়
॥
তিনি
ব্রাহ্মণ হোন, শূদ্র হোন,
সন্ন্যাসী হোন, যাই হোন
না কেন তাতে কিছু
যায়-আসে না। তাঁর
প্রকৃত যোগ্যতা হচ্ছে যে তিনি কৃষ্ণ
তত্ত্ববেত্তা, তিনি কৃষ্ণকে জানেন।
আর
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কীভাবে জানা যায় সে
সম্পর্কে ভগবান অর্জুনকে গীতায় বলেছেন, ভক্তহসি মে সখা চেতিÑ
আমি এই রহস্য তোমার
কাছে উন্মোচন করেছি বা ব্যক্ত করছি।
আমি কেন এটা তোমাকে
জানচ্ছি? কারণ তুমি আমার
ভক্ত। তা না হলে
জানাতাম না। ভগবানকে কে
জানতে পারে? যিনি ভগবানের ভক্ত
তিনি জানতে পারেন। অন্যথায় ভগবানকে জানা সম্ভব নয়।
তাই, “যেই কৃষ্ণ তত্ত্ববেত্তা
সেই গুরু হয়।”- গুরুর
যোগ্যতাই হচ্ছে যে তিনি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা
অর্থাৎ তিনি কৃষ্ণের ভক্ত।
তাই এভাবে যদি গুরুদেবের কাছে
আত্মসমর্পণ হয় তাহলে কৃষ্ণ
তাকে গ্রহণ করেন।
এতক্ষণ
গুরুদেবের যোগ্যতা সম্পর্কে সংক্ষেপ আলোচনা হলো। এখন শিষ্যের
যোগ্যতা কী? শিষ্য কথাটির
অর্থ হচ্ছে যে, শাসন গ্রহণ
করতে প্রস্তুত গুরুদেবের কাজ হচ্ছে শাসন
করা, শিষ্যকে শাসানো। আর শিষ্যের প্রস্তুত
থাকতে হবে গুরুদেবের কাছ
থেকে সেই শাস্তিটি গ্রহণ
করার জন্য। গুরুদেব আমাকে শাসন করলে আমি
গুরুদেবকে ত্যাগ করে চলে গেলাম,
সে শিষ্য নয়। গুরুদেব যখন
মিষ্টি মধুর কথা বলবেন
তখন তাঁর কাছে থাকব,
তাঁর কথা শুনব। আর
যেই গুরুদেব আমার ভুল-ত্রুটিগুলো
দেখতে শুরু করলেন, আমাকে
শাসন করতে শুরু করলেন,
তখন মন ভেঙে গেল,
এই রকম অবস্থা যার
হবে সে শিষ্য নয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে
শিষ্য মানে যে শাসন
গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তাই
দীক্ষা নেওয়ার আগে সকলকে বিচার
করে নিতে হবে যে
শাসন মানে প্রস্তুত কিনা?
এখন
আমরা বিচার করি দিব্যজ্ঞানটি তাহলে
কী? দিব্যজ্ঞান মানে হচ্ছে ‘কৃষ্ণতত্ত্বজ্ঞান’। কৃষ্ণসম্বন্ধীয় জ্ঞান
হচ্ছে দিব্যজ্ঞান। আর কৃষ্ণসম্বন্ধীয় জ্ঞান
মানেÑ কৃষ্ণের রূপ সম্বন্ধীয় জ্ঞান,
কৃষ্ণের গুণ সম্বন্ধীয় জ্ঞান,
কৃষ্ণের লীলা সম্বন্ধীয় জ্ঞান,
কৃষ্ণের ধাম সম্বন্ধীয় জ্ঞান,
কৃষ্ণের পার্ষদ সম্বন্ধীয় জ্ঞান, কৃষ্ণের ভক্ত সম্বন্ধীয় জ্ঞান,
কৃষ্ণের পরিকর সম্বন্ধীয় জ্ঞান। এগুলোই হচ্ছে দিব্যজ্ঞান।
এ
জড়জগতের জ্ঞানটি অজ্ঞান। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানটি কী? তা হলো
ভগবৎতত্ত্বজ্ঞান। সেই জ্ঞানটি লাভ
করার পর সে জ্ঞানটির
যখন উপলব্ধি হয় সেটি হলো
বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান।
কৃষ্ণ কে তা আমরা
থিওরেটিকালি জানলাম কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি উপলব্ধি ছাড়া ততক্ষণ পর্যন্ত
সেটি কেবল জ্ঞান। কিন্তু
যখন সেই দিব্য জ্ঞান
হৃদয়ে প্রকাশিত হয়, তখন সেটিকে
বলা হয় বিজ্ঞান। যারা
দীক্ষালাভ করতে চায় তাদের
এই দিব্যজ্ঞান বা বিজ্ঞান লাভের
প্রয়াসী হতে হবে। অতএব
আমাদের বিচার করে দেখতে হবে
যে, দীক্ষা কেবল একটি অনুষ্ঠান
নয়।
Tags
প্রবচন