সময় গেলে সাধন হবে না | Boiling frog syndrome

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, “Boiling Frog Syndrome” যার অর্থ হলো সঠিক সময়ে কাজ না করার পরিণাম। এটি একটি নীতিশিক্ষামূলক রূপক গল্প। একটি ব্যাঙকে কোনো হাড়িতে রেখে পানির মধ্যে নিয়ে গরম করতে থাকলে ব্যাঙটি হাড়ির মধ্যে রাখা পানির সাথে নিজের দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে। পানির তাপমাত্রা বাড়ানোর সাথে সাথে নিজের দেহের তাপমাত্রাও বাড়াতে থাকে, কিন্তু পানি যখন ফুটতে আরম্ভ করে তখন ব্যাঙটি আর হাড়িতে রাখা ফুটন্ত গরম পানির সাথে নিজের দেহের তাপমাত্রার সমন্বয় করতে পারে না এবং একই সাথে তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে হাড়ির মধ্যে থেকে লাফ দিয়ে নিচেও নামতে পারে না। কারণ হাড়িতে রাখা গরম পানির তাপমাত্রার সাথে নিজের তাপমাত্রার সমন্বয় করতে গিয়ে ব্যাঙটি তার সঞ্চিত সমস্ত শক্তি ততক্ষণে ব্যয় করে ফেলেছে। এ অবস্থায় ফুটন্ত পানির মধ্যে থেকে শক্তি হারিয়ে ফেলায় আর লাফ দিয়ে বের হতে পারে না, বরং পানিতে সিদ্ধ হয়ে মরতে হয়। কারণ যে কাজটি প্রথম অবস্থায় করার দরকার ছিল সেটি অনেক দেরি হওয়ার ফলে তা করতে চাইলেও আর সম্ভব হয় না।

hksamacar

আমরা যদি অল্প বয়স থেকে কৃষ্ণভক্তির অনুশীলন না করি তাহলে আমরা হঠাত্ করে কিছু করতে পারবো না। যথাসময়ে এসএসসি পাশ করতে হলে যেমন পাঁচ বছর বয়স থেকে পড়ালেখা শুরু করতে হয় ঠিক তেমনই ভক্তি জীবনে কেউ যদি উন্নতি করতে চায়, তাহলে পাঁচ বছর বয়স থেকে ভক্তি জীবনের অনুশীলনের খুবই দরকার।  কেননা হঠাত্ করে কোনো কিছু করা যায় না।আর তাছাড়া আমাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমরা খারাপ কিছুর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি, যা শাস্ত্র বিরুদ্ধ। যেখান থেকে আমাদের মনকে তুলে আনা অনেক অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। সুতরাং, আসুন বহু সময় আমাদের জীবনে কৃষ্ণচিন্তাহীনভাবে অস্তমিত হয়েছে। এখনই আপনি কৃষ্ণভাবনার অনুশীলন করে সময়ের প্রকৃষ্ট সত্-ব্যবহার করুন,তাহলে আপনার জীবন সুখময় ও সুন্দর হবে।
শ্রীমদ্ভাগবতে অাছে,                                             
কৌমার অাচরেৎ প্রাজ্ঞো ধর্মান্ ভাগবতানিহ্।

                     দুর্লভং মনুষং জন্ম তদপ্যধ্রুবমর্থদম্ ।। (৭ম স্কন্ধ, ৬ষ্ঠ অধ্যায়, শ্লোক ১)  
প্রহ্লাদ মহারাজ বললেন- “প্রাজ্ঞ ব্যক্তি মনুষ্যজন্ম লাভ করে জীবনের শুরু থেকেই, অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই অন্য সমস্ত প্রয়াস ত্যাগ করে ভাগবত-ধর্ম অনুষ্ঠান করবেন। মনুষ্যজন্ম অত্যন্ত দুর্লভ, এবং অন্যান্য শরীরের মতো অনিত্য হলেও তা অত্যন্ত অর্থপূর্ণ, কারণ মনুস্য-জীবনে ভগবানের সেবা সম্পাদন করা সম্ভব। নিষ্ঠাপূর্বক কিঞ্চিৎ মাত্র ভগবদ্ভক্তির অনুষ্ঠান করলেও মানুষ পূর্ণসিদ্ধি লাভ করতে পারে।” 
বৈদিক সভ্যতা এবং বেদ অধ্যয়ন করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানুষকে ভগবদ্ভক্তির আদর্শ স্তরে উন্নীত করা। তাই বৈদিক প্রথায় জীবনের শুরু থেকেই ব্রহ্মচর্যের শিক্ষা দেওয়া হয় যাতে শৈশব থেকে, অর্থাৎ পাচঁ বছর বয়স থেকেই মানুষ এমনভাবে আচরণ করতে শেখে, যার ফলে সে পূর্ণরূপে ভগবানের সেবায় যুক্ত হতে পারে। ভগবদ্গীতায় (২ অধ্যায়, শ্লোক নং-৪০) বলা হয়েছে, “স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ” -- অর্থাৎ ভগবদ্ভক্তির পথে স্বল্প উন্নতি করতে পারলেও মহাভয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আধুনিক সভ্যতা বৈদিক নির্দেশ অনুসরণ করছে না বলে তা মানুষকে এতই নিষ্ঠুরভাবে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যে, শিশুদের ব্রহ্মচারী হওয়ার শিক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করার অজুহাতে মাকে তার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করার শিক্ষা দিচ্ছে। আর ভাগ্যক্রমে কোনো সন্তান যদি রক্ষা পায় তাহলে তাকে কেবল ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধনের শিক্সা দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে ক্রমশ সারা পৃথিবী জুড়ে মানব-সমাজ জীবনের প্রকৃত সাফল্যের প্রতি উদাসীন হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, মানুষেরা তাদের দুর্লভ মনুষ্য-জন্মের অপব্যবহার করে কুকুর-বিড়ালের মতো জীবন-যাপন করছে। সমস্ত স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং গৃহে সমস্ত শিশু ও যুবকদের ভগবানের কথা শ্রবণ করার শিক্ষা দেওয়া উচিত। অর্থাৎ তাদের শিক্ষা দেওয়া উচিত কিভাবে ভগবদ্গীতার উপদেশ শ্রবণ করতে হয়, সেই উপদেশ অনুসারে জীবন-যাপন করতে হয় এবং তার ফলে পশুজীবনে অধঃপতিত হওয়ার ভয় থেকে মুক্ত হয়ে সুদৃঢ় নিষ্ঠা সহকারে ভগবদ্ভক্তি-পরায়ণ হতে হয়। এই কলিযুগে ভাগবত-ধর্ম অনুশীলন করা অত্যন্ত সহজ করে দেওয়া হয়েছে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে-
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা ।।
কেবল হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার প্রয়োজন। যারা এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করবেন, তাদের অন্তর সর্বতোভাবে নির্মর হবে, এবং তার ফলে তারা সংসার চক্র থেকে উদ্ধার লাভ করবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন