ভগবদ্গীতা আসলে কী? |
বহু মানুষের মনে এই রকম প্রশ্ন জাগে তার উত্তর শ্রীল প্রভুপাদ দিয়েছেন। ভগবদ্গীতার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ‘অজ্ঞানতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন এই জড়জগতের বন্ধন থেকে মানুষকে উদ্ধার করা।‘ প্রতিটি মানুষই নানাভাবে কষ্ট পাচ্ছে। প্রতিটি মানুষই নানারকম সমস্যায় জর্জড়িত। তাই আমরা দেখতে পাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় অর্জুনও এক মহা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন অর্জুন ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে বেশ কিছু (১৬টি) প্রশ্ন করেছিলেন, যেগুলো আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে, কেন ভগবান গীতার জ্ঞান দিলেন? তার উত্তর ভগবান দিয়েছেন, ‘বক্ষ্যামি হিতকাম্যয়া’(গীতা ১০/১)- তোমার হিতকামনায় বলব। সকল জীবের মঙ্গল কামনায় তিনি বলেছেন। কারণ তিনি সকলের পিতা এবং সুহৃদ।
তাই ভগবদ্গীতার জ্ঞান যে কেউ যে কোনো সময়ে গ্রহণ করতে পারে। প্রহ্লাদ মহারাজ মাতৃগর্ভে জ্ঞান লাভ করেছিলেন। আমরা সকলেই ছোট থেকে জ্ঞান লাভের জন্য স্কুলে যাই, পড়াশুনা করি। কেউ খবরের কাগজ দেখি, কেউ টিভি দেখি কারণ সকলেই জ্ঞান লাভের সন্ধান করছি। সকলেই বাঁচার চেষ্টা করছি- এ সবকিছুই আনন্দ পাওয়ার জন্য। ভগবদ্গীতায় ভগবান বলেছেন, সমস্ত জীবই হচ্ছে আমার অংশ, ‘মামৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ।’ এই জড় জগতে বদ্ধ জীবসমূহ আমার বিভিন্নাংশ। তাহলে ভগবানের চিন্ময় রূপ কী রকম? সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ। সৎ মানে নিত্য, চিৎ মানে জ্ঞানময় এবং আনন্দ মানে আনন্দময়। যেহেতু অমরা ভগবানের অংশ, তাই ভগবানের গুণ আমাদের মাঝে অণুপরিমাণ বিরাজমান। তাই আমরাও নিত্য থাকতে চাই, মরতে চাই না। আমরাও জ্ঞান লাভ করতে চাই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এবং আমরা সকলেই আনন্দ পেতে চাই- কেউই দুঃখ পেতে চাই না। ভগবান অর্জুনকে তাই বিজ্ঞান যোগ দান করলেন এবং বললেন-
জ্ঞানং তেহহং সবিজ্ঞান
মিদং বক্ষ্যামিশেষতঃ।
যজ্জ্ঞাত্বা নেহ ভূয়োহন্য জ্ঞাতব্যমবশিষ্যতে ॥
যজ্জ্ঞাত্বা নেহ ভূয়োহন্য জ্ঞাতব্যমবশিষ্যতে ॥
‘আমি এখন তোমাকে বিজ্ঞানসমন্বিত এই জ্ঞানের কথা বলব, যা জানা হলে এই জগতে আর কিছুই জানবার বাকি থাকে না।’
যেমন আপনি বিজ্ঞানের তৈরি জিনিস ফ্রিজ ব্যবহার করছেন। তার ভেতর ভালো জিনিস রান্না করে রাখলে কিছু দিনের জন্য ভালো থাকবে। কিন্তু পঁচা বা খারাপ জিনিস রাখলে ওটাকে ভালো করতে পারবে না। ভগবান বলেছেন, আমার এই জ্ঞান পরমবিজ্ঞান সমন্বিত গুহ্য জ্ঞান, ভালোকে আরো ভালো করবে। এমনকি খারাপের থেকেও যদি খারাপ থাকে, তাকেও শুদ্ধ করে তুলবে-
অপি চেৎ সুদুরাচারো
ভজতে মামনন্যভাক্।
সাধুরেব স মন্তব্যঃ সম্যগ্ ব্যবসিতো হি সঃ ॥
সাধুরেব স মন্তব্যঃ সম্যগ্ ব্যবসিতো হি সঃ ॥
‘অতি দুরাচারী ব্যক্তিও যদি অনন্য ভক্তি সহকারে আমাকে ভজনা করে, তাকে সাধু বলে মনে করবে, কারণ তিনি যথার্থ মার্গে অবস্থিত।’
অনেকে বলে থাকে গীতা পড়ে কী হবে? কর্ম করতেই হবে। সেই প্রশ্নের উত্তর ভগবান দিয়েছেন- কর্মযোগে খুব সুন্দরভাবে কর্ম না করে কেউ ক্ষণকাল থাকতে পারে না। শ্রীমৎ ভক্তিপুরুষোত্তম স্বামী মহারাজ সবসময় বলে থাকেন, গীতার উপদেশ মন দিয়ে শ্রবণ করে অর্জুন আরো ভালো করে যুদ্ধ করেছিলেন- যুদ্ধ ছেড়ে চলে যান নি। তাই আমাদের চলার পথে যে সকল প্রশ্নগুলো আসে সেগুলোর খুব সহজে সমাধান করে আমরা কর্তব্যকর্ম আরো ভালোভাবে করে যেতে পারবো। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, আমাদের কোনো অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে না। যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায় থেকে গীতাটি পড়ুন এবং তার শিক্ষাগুলো গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। যেমন কেউ কোনো খারাপ কাজ করতে চায় না, কিন্তু স্বভাবের ফলে বলপূর্বক যেন কেউ ভিতর থেকে বাধ্য করায়- এটি প্রত্যেকেরই হয়। অর্জুন আমাদের হয়ে প্রশ্ন করেছেন গীতায় ৩/৩৬ নং শ্লোকে, ভগবান খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন।
আমরা একদিন মারা যাবো বা কাউকে মারা যেতে দেখেছি- কিন্তু কীভাবে মারা গেলে আমাকে এ দুঃখপূর্ণ জগতে আসতে হবে না তার কথা গীতায় (৮/৫) খুব সুন্দরভাবে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন। এছাড়াও অষ্টম অধ্যায়ে আছে কোন পক্ষে মারা গেলে কোন গতি প্রাপ্ত হবে।
আবার চতুর্দশ অধ্যায়ের ১৪, ১৫ নং শ্লোকে উল্লেখ আছে কোন গুণে মারা গেলে আপনি কোন দেহ লাভ করবেন। একজন ব্যক্তি যা পায় তা-ই খায়। একজন ব্যক্তি খুব ঝাল, খুব মিষ্টি বা কিছু জিনিস অতিরিক্ত খেতে ভালোবাসেন, আবার কোনো ব্যক্তি আছে সুস্বাদু টাটকা বা গরম খাবার খেতে ভালোবাসে- এর কারণ কি তা চতুর্দশ অধ্যায়ে আছ। ভগবদ্গীতার জ্ঞান অপ্রাকৃত জ্ঞান। এ জড়জগতে কেবল অর্জুনই নন- আমরা সকলেই সর্বদা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় জর্জরিত, তাই আমরাও যদি অর্জুনের মতো গীতার জ্ঞান শ্রদ্ধাবনত হয়ে শ্রবণ করি এবং পাঠ করি তাহলে আমরাও জড়জগতের বন্ধন হতে সহজে মুক্ত হতে পারবো। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করে দেবার জন্যই এ পৃথিবীতে অবতরণ করেন। তিনি তাঁর বন্ধু অর্জুনকে শিক্ষার্থীরূপে গ্রহণ করে ভগবদ্গীতার মাধ্যমে আমাদের মতো বদ্ধজীবকে বিশেষভাবে কৃপা করার জন্য এ ভগবদ্তত্ত্বজ্ঞান দান করেছেন। অর্জুনকে ভগবান এটাও বলেছেন- অর্জুন তুমি যদি বিশ্বাস না করো, পরীক্ষা করে দেখো এ জ্ঞান কিভাবে তোমাকে প্রত্যক্ষ্যভাবে নিত্যসুখ প্রদান করছে-
আবার চতুর্দশ অধ্যায়ের ১৪, ১৫ নং শ্লোকে উল্লেখ আছে কোন গুণে মারা গেলে আপনি কোন দেহ লাভ করবেন। একজন ব্যক্তি যা পায় তা-ই খায়। একজন ব্যক্তি খুব ঝাল, খুব মিষ্টি বা কিছু জিনিস অতিরিক্ত খেতে ভালোবাসেন, আবার কোনো ব্যক্তি আছে সুস্বাদু টাটকা বা গরম খাবার খেতে ভালোবাসে- এর কারণ কি তা চতুর্দশ অধ্যায়ে আছ। ভগবদ্গীতার জ্ঞান অপ্রাকৃত জ্ঞান। এ জড়জগতে কেবল অর্জুনই নন- আমরা সকলেই সর্বদা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় জর্জরিত, তাই আমরাও যদি অর্জুনের মতো গীতার জ্ঞান শ্রদ্ধাবনত হয়ে শ্রবণ করি এবং পাঠ করি তাহলে আমরাও জড়জগতের বন্ধন হতে সহজে মুক্ত হতে পারবো। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করে দেবার জন্যই এ পৃথিবীতে অবতরণ করেন। তিনি তাঁর বন্ধু অর্জুনকে শিক্ষার্থীরূপে গ্রহণ করে ভগবদ্গীতার মাধ্যমে আমাদের মতো বদ্ধজীবকে বিশেষভাবে কৃপা করার জন্য এ ভগবদ্তত্ত্বজ্ঞান দান করেছেন। অর্জুনকে ভগবান এটাও বলেছেন- অর্জুন তুমি যদি বিশ্বাস না করো, পরীক্ষা করে দেখো এ জ্ঞান কিভাবে তোমাকে প্রত্যক্ষ্যভাবে নিত্যসুখ প্রদান করছে-
‘প্রত্যক্ষাবগমং ধর্মং সুসুখং কর্তব্যমব্যয়ম্।’(গীতা ৯/২)
সর্বশেষে আমি সকল পাঠকদের অনুরোধ করবো এই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা গ্রন্থটি আপনি নিজে পড়–ন এবং অন্যকে পড়তে সাহায্য করুন।