ব্যক্তির মন যদি পবিত্র হয়, তাহলে এভাবে সমগ্র মানব সমাজ পবিত্র ও সুন্দর হয়ে ওঠে। শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক যে সমস্ত সমস্যার আমরা সম্মুখীন হচ্ছি তার সমস্ত সমাধান করা সম্ভব হয়, যদি আমরা আমাদের পূর্বতন মহাজনদের উপদেশ-নির্দেশ মতো আচরণ করি। বিশেষত কলিযুগের কলি-প্রভাবিত শিক্ষা ব্যবস্থায় মহাজনদের নির্দেশগুলো আমরা পাই না বললেই চলে। হয়তো কোনো কোনো শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তি আমাদের পূর্বপুরুষ মহাত্মাগণের হিতোপদেশ প্রচার করবেন।
আম্ররা শুনে থাকি নানা মুনির নানা মত। আমরা প্রায়ই বিভ্রান্ত হয়ে থাকি এই ভেবে যে, কোনো মহাত্মার পদাঙ্ক আমরা জীবনপথে এগিয়ে যাবো, কোন্ মহাত্মার পদাঙ্ক আমরা অনুসরণ করবো, বা কোন্ মহাত্মার অভিমত আমরা গ্রহণ করবো? এ বিষয়ে আমরা বৈদিক শাস্ত্রের নির্দে শ অনুসন্ধান করতে পারি। আমাদের মনুষ্য প্রজন্মের কল্যাণার্তে মহর্ষি ব্যাসদেব সমস্ত বেদশাস্ত্র লিপিবদ্ধ করেছেন। নানা-মুনি নানা মত-পথ নির্দেশ করলেও ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে যখন যক্ষ প্রশ্ন করলেন, কোনটা প্রকৃত পথ? কঃ পন্থাঃ?
যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন, “মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ।”
মহাজনরা যে পথে গমন করেন, সেটিই প্রকৃত পন্থা বা পথ। অর্থাৎ মহাজনদের দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে যেই পথ। (মহাভারত বনপর্ব)
শ্রীমদ্ভাগবতে মহর্ষি ব্যাসদেব উল্লেখ করেছেন, “এই মহাজন কারা?” যখন যমদূতেরা অজামিলকে যমদূয়ারে নেওয়ার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন তখন বিষ্ণুদূতেরা যমদূতদের সবিক্রমে বাধা দিয়েছিলেন। অগত্যা যমদূতেরা তাদের প্রভু যমরাজের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, হে মহারাজ, এই অজামিলকে ধর্মতঃ পাশবদ্ধ করতে গিয়ে আমরা বিপন্ন হয়েছি, চতুর্ভূজ অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা আমাদের ধর্মতত্ত্বজ্ঞানহীন বলে নির্দেশ দিয়ে বিতাড়িত করল, আপনি দয়া করে বলুন, কে প্রকৃত ধর্মতত্ত্ববেত্তা এবং ব্রহ্মাণ্ডের কতজন নিয়ন্তা?
শ্রীযমরাজ উত্তর দিলেন, ধর্মের বিচার অতি সুক্ষ, সবাই বুঝতে পারে না। ধর্মের প্রকৃত তত্ত্ব বারোজন ব্যক্তি জানেন-
শ্রীযমরাজ উত্তর দিলেন, ধর্মের বিচার অতি সুক্ষ, সবাই বুঝতে পারে না। ধর্মের প্রকৃত তত্ত্ব বারোজন ব্যক্তি জানেন-
স্বয়ম্ভূর্নারদঃ শর্ম্ভু কুমারঃ কপিলো মনুঃ।
প্রহ্লাদো জনকো ভীষ্মো বলিবৈর্য়াসকির্বয়ম্ ।।
প্রহ্লাদো জনকো ভীষ্মো বলিবৈর্য়াসকির্বয়ম্ ।।
অর্থাৎ “ব্রহ্মা, দেবর্ষি নারদ, শিব, সনৎকুমার, দেবহুতিপুত্র কপিল, স্বায়ম্ভুব মনু, প্রহ্লাদ মহারাজ, জনক রাজা, গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম, বলি মহারাজ, ব্যাসপুত্র শুকদেব এবং আমি যম।”
যমরাজ আরো বললেন-
দ্বাদশৈতে বিজানীমো ধর্মং ভাগবতং ভটাঃ।
গুহ্যং বিশুদ্ধং দুর্বোধং যং জ্ঞাত্বামৃতমশ্নুতে ।।
গুহ্যং বিশুদ্ধং দুর্বোধং যং জ্ঞাত্বামৃতমশ্নুতে ।।
“হে দূতগণ, এই দ্বাদশ মহাজন প্রকৃত ধর্মের তত্ত্ব জানেন। প্রকৃত ধর্ম ভাগবত-ধর্ম“ বা ভগবৎ-প্রেম ধর্ম নামে পরিচিত। তা অত্যন্ত গোপন তত্ত্ব যা সাধারণ মানুষের দুবোর্ধ্য। কিন্তু কেউ যদি ভাগ্যক্রমে তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে তবে সে, সচ্চিদানন্দময় জীবন লাভ করবে।” (ভাগবত ৬/৩/২০-২১)
মহাজন বা মহাত্মা কাকে বলে? এবং তাদের মুখ্য কর্ম কি? এই প্রসঙ্গে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন-
মহাত্মানস্তু মাং পার্থ দৈবীং প্রকৃতিমাশ্রিতাঃ।
ভজন্ত্যনন্যমনসো জ্ঞাত্বা ভূতাদিমব্যয়ম্ ।।
ভজন্ত্যনন্যমনসো জ্ঞাত্বা ভূতাদিমব্যয়ম্ ।।
“হে অর্জুন, মহাত্মাগণ সর্বদা আমার দিব্য প্রকৃতিকে আম্রয় করে থাকেন। তারা আমাকে সমস্ত জীবের আদি ও অব্যয় জেনে অনন্য চিত্তে আমার ভজনা করেন।”
![]() |
Download
Size: 4.5mb
|
মহাজন উপদেশ |
Tags
Downloads